আমরা অনেকেই নিজের ব্যবসা শুরু করতে চাই, কিন্ত সঠিক Business Idea – এর অভাবে আমারা সঠিক ব্যবসা শুরু করতে পারি না। এছাড়া ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে আমরা অনেকেই ভয় পাই। অনেক সময় যদিওবা কোন নতুন ধরনের ব্যবসার আইডিয়া খুঁজে পাই কিন্তু ব্যবসায় বিনিয়োগ করার সমস্যা সবচেয়ে ব্র হয়ে দাঁড়ায় । আপনাদের এই সমস্যা সমাধান করার জন্য আমরা আমাদের এই ওয়েবসাইটে অনেক ব্যবসার ধারনা আপনাদের সামনে তুলে ধরি। আজকের এই লেখায় বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যা কে সমাধান করার চেষ্টা করব।
আপনি কি ব্যবসায় মূলধনের জোগান নিয়ে চিন্তিত? তবে আপনার মত বেকার যুবক-যুবতী, যারা নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে চান তাদের জন্য রয়েছে দারুণ এক সুখবর রয়েছে, ব্যবসায় বিনিয়োগ করার জন্য তাদের আর চিন্তা করতে হবে না। করোনা মহামারীর জন্য সমগ্র পৃথ্বী জুড়ে লকডাউন ছিল। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির মতো এখনও ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও মোটেই স্থিতিশীল নয়। আর এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে প্রভাবিত হচ্ছে সরকারি কিংবা বেসরকারি চাকরির কর্মসংস্থান। ফলত, অনেক যুবক-যুবতীই চাকরির আশা ছেড়ে মন দিয়েছেন নিজস্ব ব্যবসা শুরু করার দিকে ।
তবে ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে বেকার যুবক যুবতীদের প্রধান যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা হলো মূলধনের জোগান। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রের মতোই এক্ষেত্রেও বেকার যুবক যুবতীদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করার জন্য সহায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা। এই যোজনার আওতায় বেকার যুবক, যুবতীদের তাদের ব্যবসা শুরু করার জন্য ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে, তাও আবার কোনোরূপ গ্যারান্টার ছাড়াই। আর আজ আমরা আলোচনা করতে চলেছি, এই প্রকল্পের সমস্ত খুঁটিনাটি বিশয় নিয়ে। কারা এই যোজনার মারফত ঋণ নিতে পারবেন, কতো টাকা পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যাবে, এই যোজনার জন্য কিভাবে আবেদন করবেন ইত্যাদি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি।
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা কি ?
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে নজরে রেখে ভারতের কেন্দ্র সরকারের তরফে প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা কার্যকরী করা হয়েছে। দেশের যুবসমাজকে ব্যবসা শুরু করার জন্য ঋণ প্রদানের মাধ্যমে মূলধনর জোগান দেওয়াই এই যোজনার উদ্দেশ্য। প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার অধীনে ভারতের যুবক যুবতীদের সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে তাদের নির্দিষ্ট সুদ সমেত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই ঋণের অর্থ শোধ করতে হয় । তবে সবচেয়ে যেটা ভাল দিক বেকার যুবক- যুবতীদের এই যোজনার আওতায় ঋণ নেওয়ার জন্য কোনোরূপ গ্যারান্টারের প্রয়োজন নেই। কারন বেকাদের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সবসময় গ্যারান্টারের একটা ব্র সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ।
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা কত প্রকারের ?
তবে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা হওয়ায় সকলের যে একই পরিমাণ ঋণের প্রয়োজন হবে তার কোনো অর্থ নেই। ফলত ঋণের পরিমাণ অনুসারে এই যোজনাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা:- শিশু ঋণ, কিশোর ঋণ, তরুণ ঋণ।
শিশু ঋণ:-
শিশু ঋণের আওতায় একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা ঋণ নিতে পারবেন। ঋণ শোধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ বছর সময় পাওয়া যাবে। শিশু ঋণের ক্ষেত্রে বছরে সুদের হার ১০ শতাংশ থেকে ১২শতাংশ ।
কিশোর ঋণ
এই কিশোর ঋণের আওতায় নতুন ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি ৫০,০০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন। সুদের হার ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল। ঋণ পরিশোধের সময়কাল ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারণ করা হবে। কোনো ব্যবসায়ী ঋণ পাবেন কিনা তা নির্ভর করছে ওই ব্যক্তির ক্রেডিট রেকর্ড এবং ব্যবসায়িক পরিকল্পনার ওপরে।
তরুণ ঋণ
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার অধীনে তরুণ ঋণের পরিমাণ সর্বাধিক। যেসকল ব্যক্তিদের নিজস্ব ব্যবসা রয়েছে এবং বর্তমানে সম্প্রসারণ চাইছেন সেসকল ব্যক্তিরা এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সুদের হার এবং পরিশোধের সময়কাল ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে একজন ব্যবসায়ী ৫ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনায় কি কি সুবিধা আছে ?
১. এই যোজনার অধীনে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে গ্যারান্টার আবশ্যিক নয়।
২. সর্বোচ্চ ৫০,০০০ থেকে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন একজন আবেদনকারী।
৩. মুদ্রা যোজনার অধীনে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনরূপ প্রসেসিং ফি লাগবে না।
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনায় কারা আবেদনের করতে পারবেন ।
১. যেসকল ব্যাক্তিরা বাণিজ্যিক যানবাহন, যেমন:- ট্র্যাক্টর, অটো রিকশা, ট্যাক্সি, ট্রলি, পণ্য পরিবহনের যানবাহন, তিন চাকার গাড়ি, রিকশা ইত্যাদি কিনতে চান তারা এই যোজনার অধীনে ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
২. সেসকল নাগরিক সেলুন, জিম, সেলাইয়ের দোকান, ওষুধের দোকান, জিনিসপত্র মেরামতির দোকান এবং ড্রাই ক্লিনার্স, ফটোকপি দোকান ইত্যাদির ব্যবসা শুরু করতে চান তারা প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার অধীনে ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
৩. অন্যদিকে যারা কৃষি বিপণন কেন্দ্র, খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, পোলট্রি, মাছ চাষ, মৌমাছি পালন, পশুসম্পদ পালন, কৃষি-শিল্প, ডেয়ারি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা শুরু করতে চান তারাও এই যোজনার অধীনে ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
৪. যে সকল ব্যক্তিরা এই সমস্ত ব্যবসাগুলি শুরু করতে চাইছেন ঋণের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে তাদের বয়স অবশ্যই ১৮ বছর হতে হবে।
৫. এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার অধীনে ঋণের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের অবশ্যই সঠিক ব্যবসায়িক পরিকল্পনা থাকতে হবে।
আবেদনের প্রয়োজনীয় নথি এবং সঠিক ব্যবসায়িক পরিকল্পনা সহ যদি কোনো আবেদনকারী সঠিকভাবে ঋণের জন্য আবেদন করে থাকেন এবং ব্যাংক কিংবা কোনো আর্থিক সংস্থার পক্ষ থেকে ওই ব্যবসায়িক পরিকল্পনা মনোনীত করা হয়, তবে আবেদনের ১০ দিনের মধ্যে ঋণ পেয়ে যাবেন।
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনায় আবেদনের পদ্ধতি –
যেসকল ব্যাক্তিরা প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার অধীনে ঋণের জন্য আবেদন করতে চান তারা উদয় মিত্র পোর্টালের https://portal.udyamimitra.in/Login মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। এছাড়াও কোনরূপ সাহায্যের ক্ষেত্রে ১৮০০ ১৮০ ১১১১ টোল ফ্রি নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন। তবে এই যোজনার আওতায় ঋণ নেওয়া যাবে কেবলমাত্র ব্যাংক কিংবা যেকোন ঋণ প্রদানকারী সংস্থার মাধ্যমে। যে সকল ব্যাংকগুলি থেকে আপনারা ঋণ পেতে পারেন, সেগুলি হলো:-
১. পাবলিক সেক্টর ব্যাংক ।
২. বেসরকারি সেক্টর ব্যাংক।
৩. গ্রামীণ ব্যাংক।
৪. রাজ্য পরিচালিত সমবায় ব্যাঙ্ক।
৫. ব্যাংক ছাড়া অন্য যেকোনো আর্থিক সংস্থা।
প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনায় আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি –
১. আবেদনকারীর আধার কার্ড।
২. আবেদনকারীর প্যান কার্ড।
৩. স্থায়ী ঠিকানা, ব্যবসার ঠিকানা এবং মালিকানার প্রমাণ।
৪. তিন বছরের ব্যালেন্স শীট।
৫. যে সকল ব্যক্তিদের নিজস্ব ব্যবসায় রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন এবং স্ব-মূল্যায়ন রিটার্ন।
৬. আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
উপসংহার –
এইরকম আরও নানান নিত্যনতুন ব্যবসা-বাণিজ্য মূলক আইডিয়া পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং ডানদিকের উপরের টেলিগ্রাম আইকনে ক্লিক করে আজই জয়েন হোন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে।