মাত্র বছর আটেক করছেন পুলিশের চাকরি। এই স্বল্প সময়েই ১,৪০০-র বেশি নিখোঁজ শিশু, কিশোর-কিশোরীকে তিনি উদ্ধার করেছেন। ভারত সরকারও তাঁর এই দক্ষতাকে সেলাম করেছে । তিনি পেয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার। তবে সেই সম্মানের সঙ্গে প্রাপ্ত অর্থ অর্থাৎ এক লক্ষ টাকা অক্লেশে দান করে দিয়েছেন রেখা মিশ্র।
তিনি বরাবর নিজের কর্মকাণ্ডের জেরে প্রায়শই শিরোনামে উঠে এসেছেন, তিনি রেলপুলিশের (সিআরপিএফ) আধিকারিক রেখা মিশ্র। পুলিশ বা সেনাবাহিনীতে তিনি যে যোগদান করবেন, ছোটবেলা থেকেই তা জানতেন। বাবা কাজ করতেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। ঠাকুরদা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। রেখার কথায়, ‘‘জনসেবা করাটা আমার রক্তেই রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই স্থির করেছিলাম যে আমি পুলিশেই কাজ করব।’’
উত্তরপ্রদেশের কানিজা গ্রামের বাসিন্দা রেখা মুম্বই রেলপুলিশে কর্মরত । রেখা জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকেই নানা খেলাধুলোয় উৎসাহ ছিল তাঁর। জনসমক্ষে ভাল বক্তৃতাও করতেন। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে অবশ্য বিএড ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। এর পর ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেন।
বিএড ডিগ্রি লাভের পর শিক্ষকতা করেননি রেখা। বরং পুলিশে কাজ করার চেষ্টা শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘‘বাবা-ঠাকুরদাকে দেখেই পুলিশের কাজ করার অনুপ্রাণিত হয়েছি। ছোট বেলা থেকেই ঠিক ক্ড়রে নিয়েছিলাম যে আমি পুলিশের চাকরি করব ।
রেখা জানিয়েছেন, অন্যদের সাহায্য করার শিক্ষা পেয়েছিলেন পরিবার থেকে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের এমন একটা পেশা বেছে নেওয়ার কথা বলা হত, যার মাধ্যমে দেশ এবং মানুষের সেবা করা যায়।’’
ছোট থেকেই কড়া অনুশাসনে বড় হয়েছেন রেখারা। তিনি বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই আমাদের ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হত। এর পর চলত ব্যায়ামের পালা।’’ পুলিশের চাকরির পরীক্ষায় পাশ করার দিনটি আজও ভোলেননি তিনি।
রেখার কথায়, ‘‘যে দিন পুলিশের চাকরির পরীক্ষায় উতরোনোর খবর পেলাম, সে দিন আমাকে স্যালুট করেছিলেন বাবা। বলেছিলেন, প্রশংসা পাওয়ার জন্য কাজ কোরো না। বরং কোনও একটি উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাও। ’’ বাবার সে কথাগুলি আজও মনে রেখেছেন রেখা।
১৯৮৬ সালে জন্ম রেখার। মধ্য তিরিশের রেখা জানিয়েছেন, পুলিশের চাকরির পরীক্ষায় পাশ করার পর মুম্বই রেলপুলিশে সাব-ইনস্পেক্টরের কাজে যোগ দেন তিনি। সেটি ছিল ২০১৪ সাল।
সাব-ইনস্পেক্টর হিসাবে রেখার প্রথম দায়িত্ব ছিল মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাসে। শিশু, কিশোর-কিশোরীদের পাচার রোখা-সহ তাঁদের উদ্ধার করাই দায়িত্ব ছিল তাঁর।
রেখার সহকর্মীদের মতে, ছোট ছেলেমেয়েরা যে বিপদে পড়েছে, তা সহজেই ধরে ফেলতে পারেন রেখা। এ বিষয়ে তাঁর দক্ষতা প্রশ্নাতীত। মুম্বই সিএসটির মতো স্টেশনের ভিড়ভাট্টায় কী ভাবে বুঝে যান যে কোন ছেলেমেয়ে বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে অথবা তাদের অপরহণ করা হয়েছে? সংবাদমাধ্যমের এ প্রশ্নের জবাবে রেখা বলেন, ‘‘আমরা এমন ছেলেমেয়েদের খুঁজি, যাদের দেখে মনে হয় তারা হারিয়ে গিয়েছে। কোথায় যাবে, তা বুঝে উঠতে পারছে না। আমাদের সে ট্রেনিংই দেওয়া হয়েছে।’’
বছর আটেকের পুলিশের চাকরির পর রেখার নজরও অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ‘‘দারিদ্রের জ্বালায় বহু ছেলেমেয়েই বাড়ি ছেড়ে কাজের খোঁজে মুম্বইয়ে পালিয়ে আসে। তবে অনেকে আবার মা-বাবার সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি করে ঘর ছাড়ে। এ রকমের আট থেকে ১২ বছরের ছেলেমেয়েই বেশি। কেউ আবার মাদকাসক্ত। কেউ আবার ফেসবুকে কারও সঙ্গে আলাপপরিচয়ের পর এখানে চলে আসে। আবার বলিউডের তারকাদের টানেও অনেকে এ শহরে পাড়ি দেয়।’’
পুলিশের চাকরিতে নিজের অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন রেখা। তাঁর কথায়, ‘‘এক বার একটি ১৬ বছরের মেয়েকে উদ্ধার করেছিলাম। ও বাড়ি ছেড়ে মুম্বইয়ে পালিয়ে এসেছিল। ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, আনমনা। আমরা ওর মা-বাবাকে খবর দিই। মেয়েটির মা-বাবা আসার পর জানতে পারি, সে অন্তঃসত্ত্বা।’’
নিজের পেশায় প্রতি দিনই বিচিত্র ঘটনার সাক্ষী হন রেখা। তিনি বলেন, ‘‘আর এক বার গোয়া থেকে আসা ৪৫ বছরের এক অপহরণকারীকে ধরেছিলাম। তাঁর সঙ্গে ১৫ বছরের একটি মেয়ে ছিল। গোয়া পুলিশ দু’জনের ছবি পাঠিয়েছিল। মুম্বই স্টেশনে পা রাখামাত্রই ওই মেয়েটিকে দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে আমার টিম ওই অপহরণকারীকে ধরে ফেলে। মেয়েটিকে বিয়ে করার জন্য তার উপর যৌন নির্যাতন করেছিল ওই লোকটি।’’
বছর ছত্রিশের রেখা জানান, কাজের চাপে নিজের ঘরসংসারের মন দিতে না পারলেও পরিবারের সকলেই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার মা-বাবা বরাবরই আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। এখন শ্বশুরবাড়িতেও পুরোপুরি সহযোগিতা পাই।
নিজের কাজ নিয়েই মেতে রয়েছেন রেখা। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি দিন ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। তবে আমি এ কাজ করতে ভালবাসি। পুলিশ আধিকারিক হিসাবে গর্বও হয়। সন্তানধারণ করাই তো নারীর একমাত্র কাজ নয়! দেশের, দশের জন্য অবিরত কাজ করাই আমার লক্ষ্য।’’ মুম্বইয়ের একটি সংবাদপত্রের রিপোর্ট জানিয়েছে, এমনকি, এক বছরে ৪৩৪ বাচ্চাকে উদ্ধার করেন তিনি।
রেখার এই নিষ্ঠার পুরস্কারও জুটেছে। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারী শক্তি পুরস্কারে তাঁকে ভূষিত করে ভারত সরকার। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ তাঁর হাতে সে পুরস্কার তুলে দেন। তবে পুরস্কার সঙ্গে প্রাপ্ত অর্থ রেখা দান করেছেন ‘চাইন্ডলাইন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে। যারা উদ্ধার হওয়ার শিশুদের পুনর্বাসনের কাজ করে। রেখার দাবি, পুরস্কারের অর্থ ওই শিশুদের প্রয়োজন, তাঁর নয়।
পুলিশের কাজ আজকের দিনে অনেকে একটু অন্য চোখে দেখে, কিন্তু প্রচুর এরকম ভাল অফিসার আছেন জারা নিজেদের সুখ ছেড়ে সাধারন মানুষের সুখ কে প্রাধান্য দেন। তাই রেখা কে অবশ্যই সেলাম জানাতে হয়।
যদি আপনার এই খবর ভাল লেগে থাকে তবে facebook এ অবশ্যই লাইক দেবেন ও অন্যকে শেয়ার করবেন।
উপসংহার –
ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কিত এইরকম আরও নানান খবর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং উপরের ডানদিকের টেলিগ্রাম আইকনে ক্লিক করে আজই জয়েন হোন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে । যদি আপনার নিজস্ব কোন মতামত থাকে তবে আপনি নিচে কমেন্ট করবেন।
এইরকম আরও নানান নিত্যনতুন ব্যবসা-বাণিজ্য মূলক আইডিয়া পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং ডানদিকের উপরের টেলিগ্রাম আইকনে ক্লিক করে আজই জয়েন হোন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে।