বাংলার মানুষের একসময় সকাল বা সন্ধ্যা জলখাবারে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্ন পেত মুড়ি-তরকারি, নারকেল মুড়ি, মুড়ি-বাদাম বা জলমুড়ি, দুধ – মুড়ি, দই-চিড়ে অথবা মাঝে মধ্যে চিড়ের পোলাও ইত্যাদি। কিন্তু সময় বদলেছে তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির জলখাবারও বাঙালিদের পালটে গেছে । চিড়ে ও মুড়ির জায়গায় বহু বাড়িতে জাঁকিয়ে বসেছে ওটস ও মুসলি। ওটসের খিচুড়ি, ওটস চিল্লা বা দই বা দুধের সঙ্গে ওটস কিংবা ফল মিশিয়ে দই বা দুধের সঙ্গে মুসলি মিশিয়েই আট থেকে আশি সেরে ফেলছে সকালের জলখাবার। অনেকে অফিসের লাঞ্চেও ছোট্ট টিফিনকৌটোয় ভরে নিয়ে চলে আসেন ওটস বা মুসলি। খাবারের এই পরিবর্তন কি শুধুই আধুনিকতার ছোঁয়া, নাকি এর সত্যিই কোনও গুণমান আছে? দেখা যাক কোন খাবারে কতটুকু পুষ্টিগুণ আছে।
মুড়ি:
১০০ গ্রাম মুড়িতে মেলে ৭৩.৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৭.৫ গ্রাম প্রোটিন। ০.১ গ্রাম ফ্যাট। ক্যালশিয়ামের পরিমাণ ২৩ মিলিগ্রাম। এছাড়া আয়রন মেলে ৬.৬ মিলিগ্রাম। ১০০ গ্রাম মুড়িতে ৩২৫ ক্যালোরি মেলে।
চিড়ে:
১০০ গ্রাম ঢেঁকি ছাঁটা চিড়েতে মেলে ৭৭.৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৬.৬ গ্রাম প্রোটিন, ২০ মিগ্রা ক্যালশিয়াম ও ২০ গ্রাম আয়রন ও ৩৪৬ ক্যালোরি শক্তি।
ওটস:
১০০ গ্রাম ওটসে কোলেস্টেরল পাবেন ৬৭.৩ গ্রাম। প্রোটিন ১৩.৬ গ্রাম। আয়রন ৫ গ্রাম এবং ৪০৭ ক্যালোরি শক্তি।
মুসলি:
১০০ গ্রাম মুসলি থেকে ৬৬.১৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। ৮.২৪ গ্রাম প্রোটিন। ৪.১৭ গ্রাম ফ্যাট মেলে। রয়েছে ২৮৯ ক্যালোরি শক্তিও। তবে মুসলিতে সুগার থাকে ২৬.৩৫ গ্রাম। যেসব মুসলির প্যাকেটে জিরো অ্যাডেড সুগার থাকে। তাতে আবার সোডিয়ামের মাত্রা অনেকটা বেশি হয়। অর্থাৎ নুন বেশি পরিমাণে থাকে।
মুড়ি-চিড়ে নাকি ওটস মুসলি এই দ্বন্দ্বে যাওয়ার আগে নিশ্চিত করতে হবে, তা যেন শরীরের প্রয়োজন ও ওজন বুঝে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের সুন্দর সমাহার হয়।
মুড়ি-চিড়ে নিয়মিত খেলে কি লাভ বা ক্ষতি
মুড়ি বা চিড়ে এই দুই খাবারে মূলত তাৎক্ষণিক শক্তি পাওয়া যায়।
মুড়ির সঙ্গে একটু দুধ বা দই বা তরকারি মেখে খেলে পেটও অনেকক্ষণ ভরা থাকে।
মুড়ি সহজলভ্য ও আর্থিক দিক থেকেও পকেটসই।
চিড়ে ও মুড়ির মত কাজ বেশ কার্যকরী । তাৎক্ষণিক শক্তি বৃদ্ধিতে চিড়ের জুড়ি নেই।
চিড়েতে আয়রন বেশি থাকায় রক্তাল্পতায় উপকারী।
মুড়ি বা চিড়ে যা-ই খান না কেন, খেয়াল রাখতে হবে এতে যা মিশিয়ে খাচ্ছেন, তা যেন স্বাস্থ্যকর হয়।
মুড়ির সঙ্গে চানাচুর, ঝুরিভাজা বা চপ মিশিয়ে খেলে কিন্তু উপকার পাওয়া যাবে না।
অনেকে চিড়েকে তেলে ভেজে, সঙ্গে নানা মশলা ও চানাচুর, কারিপাতা যোগ করে স্ন্যাক্স হিসেবে খান। এইভাবে খেলে খুব একটা লাভ পাওয়া যায় না ।
বরং চিড়ে দই, নানা সব্জি দিয়ে চিড়ের পোলাও অনেক উপকারী।
পেটের অসুখে চিড়ে সেদ্ধও কার্যকর।
ক্ষতির অঙ্ক বিচার করতে বসলে মুড়ি-চিড়েয় ওজন কমানোর বা লাইফস্টাইল ডিজিজের সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতাও কম। দুই খাবারই তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায় । কিন্তু দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখার মতো ফাইবার নেই। তবে শর্করা বেশি থাকায় ডায়াবেটিকদের মুড়ি ও চিড়ে খাওয়ায় লাগাম টানতে হবে।
ওটস-মুসলির খেলে কি কি সুবিধা-অসুবিধা পাওয়া যাবে
ওটস বা মুসলি হালে খাবারের পাতে যোগ হলেও এদের পুষ্টিগুণ মারাত্মক। বিশেষ করে লাইফস্টাইল ডিজিজের সঙ্গে লড়তে ওটস বা মুসলিকে খাদ্যতালিকায় যোগ করতে বলেন পুষ্টিবিদরা।
এদের ফাইবার যেমন দার্ঘক্ষণ পেট ভরায়, তেমন হজমশক্তি বাড়ায় ও ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে।
দু’-তিন চামচ ওটসের সঙ্গে দুধ, বা দই মিশিয়ে খেলে বা ওটসের খিচুড়ি ও চিল্লা খেলে কম করেও দু’-তিন ঘণ্টা পেট ভরে থাকে।
আজেবাজে খাবারের প্রতি আসক্তি কমে। ওটসে ক্যালোরিও মেলে অনেকটা। তাই কর্মক্ষমতায় বাড়ে।
আর মুসলিতে কিন্তু ক্যালোরি অত বেশি থাকে না। তাছাড়া মুসলির প্যাকেটে অনেকটা সুগার যোগ করা থাকে।
জিরো অ্যাডেড হলে আবার তাতে নুনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। তাই মুসলি সুগার, হার্টের অসুখ বা ওবেসিটিতে খুব আদর্শ নয়।
কোন খাবারের খরচ কতটা
শুধু খাবারের গুণ দেখলেই চলবে না। সেই খাবার যেন আপনার পকেট কে সাপোর্ট করে তা দেখতে হবে। যা এককথায় সস্তায় পুষ্টিকর হবে। মুড়ি-চিড়ের যা দাম, ওটস বা মুসলির দামের থেকে অনেক কম।
তাই পকেটে কুলোলে ওটসকে রাখুন পাতে। আর বাজেটে না পোষালে অবশ্যই চিড়ে বা মুড়িকে আপন করুন। সেক্ষেত্রে মুড়ি বা চিড়ের সঙ্গী খাবারটি যেন স্বাস্থ্যকর খাবার হয়।
আমাদের এই তথ্য যদি আপনার ভাল লাগে বা আপনার যদি কোন কাজে লাগে তবে অবশ্যই Facebook / ফেসবুক এ লাইক দেবেন এবং আপনার বন্ধু প্রিয়জনকে শেয়ার করবেন।