আমাদের দেশে চন্দ্রমল্লিকা একটি অতি পরিচিত ফুল। শীতের ফসল হিসাবে চন্দ্রমল্লিকা ভীষণ জনপ্রিয় একটি ফুল। এই ফুল কে ‘শরৎ রানি’ নামেও অভিহিত করা হয়। বেশ কিছু বছর ধরে এই ফুলের চাহিদা ভীষণ ভাবে বাড়ছে, এবং সে সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বাণিজ্যিকভাবে চাষ ।
পশ্চিমবঙ্গে চন্দ্রমল্লিকার চাষ মূলত পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনা হয়ে থাকলেও রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও এর ব্যাপকভাবে চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে বেশকিছু যায়গায় চন্দ্রমল্লিকার চাষ ব্যপক ভাবে হয়। সাধারণত সেপ্টেম্বরের শেষ এবং অক্টোবরের শুরুতে হলেও শীতকালীন মরশুমই এর ফুল ফোটার প্রকৃত সময়। তবে চাষ পধতি সাধারন ফুলের মত হলেও এই ফুলের রোগ দমনই সাফল্যের চাবিকাঠি।
শীতের মরশুমে চন্দ্রমল্লিকার রূপের বাহার মুগ্ধ করে সকলকে। কিন্তু এই ফুল ফোটাতে কৃষককে যত্ন নিতে হবে। রোগ প্রতিকার করতে হবে।
আপনি খুবই কম জায়গার উপর এই ফুলের চাষ করতে পারেন, ১ বিঘে থেকে ২ বিঘে জমির উপর চাষ করলে ৩-৪ মাসের ভেতর আপনি একটা ভাল টাকা আয় করতে পারবেন। অনেকে টবে বাড়ির সামনে বা ছাদের উপর এই ধরনের তবে মাটিতে চাষ করলে ফলন বেশী পাবেন, এবং এই চাষ খুবই কম দিনের ভেতর করা যায় তাই আয়ের জন্য আপনাকে বেশী দিন অপেক্ষা করতে হবে না।
চন্দ্রমল্লিকার বিভিন্ন রোগ এবং তার প্রতিকারের উপায়গুলি দেখে নেওয়া যাক।
লিখেছেন বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের গবেষক অনিন্দিতা পাটোয়ারী।
পাতা ধসা বা পাতা পচা রোগ: এটি একটি ছত্রাক ঘটিত রোগ যা Septoria sp. নামক ছত্রাকের জন্য হয়। বাড়ন্ত গাছের নিচের দিকের পুরনো পাতায় প্রথমে এই রোগের লক্ষণ দেখা যায়।
প্রতিকার –
গাছের পাতায় জল না দিয়ে গোড়ায় জল দেওয়া উচিত। যাতে গাছের পাতা শুকনো থাকে এবং গাছের গোড়ায় জল না জমে।
রোগের লক্ষণ বেশি মাত্রায় বেড়ে গেলে পর্যায়ক্রমে ১০-১২ দিন অন্তর যেকোনও একটি ছত্রাকনাশক স্প্রে করুন। কপার অক্সি ক্লোরাইডের গ্রুপের ওষুধ যেমন ব্লাইটক্স (৪ গ্রাম) বা ম্যানকোজেব গ্রুপের ওষুধ যেমন ইন্দোফিল এম ৪৫ (২.৫ গ্রাম) এর সঙ্গে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ওষুধ ব্যাভিস্টিন ( গ্রাম) অথবা ডাইফেনোকোনাজোল গ্রুপের ওষুধ যেমন স্কোর (১ মিলি) বা অ্যাজোক্সিস্ট্রোবিন, গ্রুপের ওষুধ অ্যামিস্টার (১ মিলি) প্রতি লিটার জলের সঙ্গে মিশিয়ে ১২-১৫ দিন অন্তর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
গ্রে মোল্ড: গ্রে মোল্ড হল চন্দ্রমল্লিকার মারাত্মক ও অন্যতম রোগ যা Botrytis cinerea নামক ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে। এখন প্রায় সব জায়গায় এই রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। অক্টোবর মাসের পর আবহাওয়ার আর্দ্রতা বেড়ে গেলে এবং মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। এ রোগের আক্রমণে ফুলের পাপড়ি, পাতা এমনকী কাণ্ডেও বাদামি জলে ভেজা দাগ দেখা যায়।
প্রতিকার –
অতিরিক্ত সার বিশেষত নাইট্রোজেনযুক্ত সার ব্যবহার বন্ধ করুন। জমি পরীক্ষা করে সার ব্যবহার করলে ভাল হয়।
রোগের লক্ষণ বেশিমাত্রায় দেখা গেলে পর্যায়ক্রমে ১০ দিন অন্তর উল্লেখিত যে কোনও একটি ছত্রাকনাশক স্প্রে করুন। জলে দ্রবণীয় ক্যাপ্টেন ৫০% পাউডার ১ থেকে ১.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে, গন্ধকগুঁড়ো ৮০% পাউডার ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে, রোভরাল ৫০% পাউডার ১ থেকে ১.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করুন।
এইরকম আরও নানান নিত্যনতুন ব্যবসা-বাণিজ্য মূলক আইডিয়া পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং ডানদিকের উপরের টেলিগ্রাম আইকনে ক্লিক করে আজই জয়েন হোন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে।
Source – Sanbad Pratidin