পড়ে থাকা জমি নিয়ে শুরু করেছিলেন ব্যবসা, আজ তিনি কোটীপতি- জানুন কিভাবে ?

You are currently viewing পড়ে থাকা জমি নিয়ে শুরু করেছিলেন ব্যবসা, আজ তিনি কোটীপতি- জানুন কিভাবে ?

আমরা অনেকেই নিজের ব্যবসা শুরু করতে চাই, কিন্ত সঠিক Business Idea – এর অভাবে আমারা সঠিক ব্যবসা শুরু করতে পারি না। আনেক সময় আমরা ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে ভয় পাই। কিন্তু আমাদের আশেপাশে অনেক সফল মানুষ আছেন যারা অনেক কম টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করেছেন এবং আজ প্রচুর টাকা ইনকাম করে সফল হয়েছেন। আজ আপনাদের কে এরকম একজনের কথা জানাবা।

মায়ারানী

আজ আপনাদের ঢাকার নবাবগঞ্জের এক নারী কৃষক “মায়ারানী বাউল” এর কথা বলব , যিনি মহিলা হয়েও নিজের সাহসে আজ এক বিশাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। মায়ারানী কৃষিকাজ করেন। গরু পোষেন। শুরু করেছিলেন একটি বাছুর থেকে এখন তাঁর খামারে গরুর সংখ্যা অর্ধশতাধিক। মায়ারানী মোট ৩০ বিঘা জমিতে খামার তৈরি করেছেন। মায়ারানী বলেন, ‘আমি শিল্পী বাউল না। বাউল আমাদের পরিবারের পদবি। আমি আসলে পরিশ্রমী কৃষক।

ঢাকার নবাবগঞ্জের এই নারী কৃষক ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারে’ সেরা কৃষক হিসেবে দুই দুই বার পুরস্কার পেয়েছেন—২০১৭ সালে ব্রোঞ্জ ও ২০২১ সালে স্বর্ণ। তাঁকে দেখে গ্রামের প্রায় পাঁচ শ নারী কৃষিকাজ করছেন। বাড়িতে গবাদিপশু পালন করছেন অনেকে। তাঁদের গ্রামটিকে এখন অনেকেই বলেন, নারী কৃষকের গ্রাম। এবং এটা সম্ভব হয়েছে মায়ারানী-এর জন্য, তিনিই তাঁদের প্রেরণার উৎস। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফারজানা জাহানের কথায়, মায়ারানী তাঁর যোগ্যতা দিয়েই জাতীয় স্বর্ণপদক বিজয়ী হয়েছেন।

মায়ারানী বাউলের বাড়ি নবাবগঞ্জ উপজেলার বাহ্রা ইউনিয়নের কান্দামাত্রা গ্রামে। নবাবগঞ্জ এলাকার ঐতিহ্যবাহী আদি বাড়িগুলোর মতোই মায়ারানীর বাড়িও টিনের। বাড়ির এক প্রান্তে থাকার ঘর, অন্যদিকে পরপর সাতটি টিনের দোচালা ছাউনি। মেঝে পাকা করা। চারপাশে বুকসমান উঁচু ইটের দেয়াল দিয়ে ঘেরা। এখানেই থাকে মায়ারানীর গরুগুলো।

এখন আছে ছোট–বড় মিলিয়ে আছে ৫০টি। গত ঈদুল আজহায় বিক্রি করেছেন আটটি। তাতে ১৪ লাখ টাকার মতো এসেছে। এখন রোজ ১০০ লিটারের বেশি দুধ হয়। প্রতি লিটার ৬০- ৭০ টাকা। গরুর পরিচর্যার জন্য পাঁচজন লোক কাজ করেন।

কিভাবে শুরু এই গরুর খামার

মায়ারানীর গল্পটি বেশ আকর্ষণীয়। তাঁর স্বামী জগদীশ চন্দ্র বাউল পেশায় পল্লিচিকিৎসক। নবাবগঞ্জ বাজারে তাঁর ডিসপেনসারি। উত্তরাধিকারসূত্রে তিনি প্রায় ২০ বিঘা জমি পেয়েছিলেন। কৃষিকাজে তাঁর আগ্রহ নেই। বর্গা, বন্দোবস্ত এসব ব্যবস্থায় দেওয়া ছিল।

তবে মায়ারানীর গভীর মায়া–মমতা ছিল চাষাবাদে। প্রথম দিকে বাড়ির চারপাশে তিনি শাকসবজি বুনতে শুরু করেন। বেশ ভালো ফলন হলো। উৎসাহ পেলেন। তাঁদের ফসলি জমিগুলোও বাড়ির সীমানা লাগোয়া। সেখানে তিনি নানা রকম সবজি চাষ করলেন। এতেও ফলন হলো চমৎকার। আগ্রহ আরও বাড়ল। ধীরে ধীরে তাঁদের সব জমিতেই তিনি নিজ উদ্যোগে নানা রকমের সবজি ও দানাদার ফসলের আবাদ শুরু করলেন। মায়ারানীর আয় বাড়তে থাকল।

এর মধ্যে ২০০৯ সালের একটি ঘটনা ঘটল। সে বছর দাপ্তরিক কাজে তাঁদের গ্রামে এসেছিলেন নবাবগঞ্জ উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ওলিউল্লাহ। তিনি মায়ারানীর বাড়িতে এসে তাঁর চাষাবাদ দেখে মুগ্ধ হলেন। বললেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে বিজ্ঞানসম্মতভাবে চাষাবাদ করলে মায়ারানী আরও ভালো করবেন। মায়ারানী কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। তাদের সহায়তা নিয়ে চাষাবাদ শুরু করলেন। এল সাফল্য।

কিভাবে ধীরে ধীরে ব্যবসা বাড়ল

মায়ারানী জানালেন, প্রতিবছর প্রায় ৫০০ মণ আমন ধান পান। ভুট্টার ফলন পান প্রায় ৬০০ মণ, শর্ষে হয় ১০০ থেকে ১২৫ মণ। দানাদার ফসল করেন এই তিনটিই। সারা বছর করলা, ডাঁটা, বরবটি, শিম এমন নানা ধরনের সবজি হয় প্রচুর। এ ছাড়া তিন থেকে পাঁচ বিঘায় নেপিয়ার ঘাসের চাষ করেন। জমি কিনেছেন ১০ বিঘা। সব মিলিয়ে তাঁর জমি এখন ৩০ বিঘার মতো।

চাষাবাদের পাশাপাশি ২০১৪ সালে মায়ারানী গরু পালন করবেন বলে ভাবলেন। প্রথমে শুরু করেছিলেন ৩৪ হাজার টাকা দিয়ে কেনা একটি সংকর জাতের বকনা বাছুর দিয়ে। তারপর দিনে দিনে বড় হলো গরুর খামার। তবে এ জন্য প্রচুর পরিশ্রম আর সার্বক্ষণিক তদারকির মধ্যে থাকতে হয় তাঁকে।

মায়ারানী জানালেন, কৃষি ও পশুপালনে তাঁর সাফল্যের কথা লোকমুখেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। একটা পর্যায়ে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে মায়ারানীর কৃষি ও গরুর খামারের সাফল্য নিয়ে প্রতিবেদন সম্প্রচারিত হয়। ২০১৭ সালে মায়ারানী ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’–এ তৃতীয় হয়ে ব্রোঞ্জপদক পান। এতে তিনি আরও অনুপ্রাণিত হন।

মায়ারানী বাউলের সাফল্য সম্পর্কে নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাহিদুজ্জামান বলেন, তিনি (মায়ারানী) শুধু কৃষকই নন। তিনি একজন ভালো সংগঠক। এলাকার নারীদের কৃষি ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী করে তুলতে উঠান বৈঠকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ওই গ্রামের প্রায় ৩০ জন নারীকে কৃষি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা করছেন তিনি। তাঁকে দেখে আরও অনেক নারী কৃষিতে অনুপ্রাণিত হয়েছেন।

গরুর খামার সম্পর্কে মায়ারানী জানালেন, নিজের জমিতে ঘাস ও ভুট্টার চাষ করেন। এগুলোই গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তা ছাড়া তাঁর কর্মীরা একই সঙ্গে মাঠের কৃষিকাজে এবং গরুর খামারেও কাজ করেন। খামারের জন্য আলাদা কর্মী রাখতে হয়নি। । চাষের জন্য নিজেই পাওয়ারটিলার ও ভুট্টা ভাঙার মেশিন কিনেছেন। দুধ থেকে ননি তোলার একটি যন্ত্র সরকারের তরফ থেকে উপহার পেয়েছেন।

মায়ারানীর পরবর্তী পরিকল্পনা

পরবর্তী পরিকল্পনা হিসাবে মায়ারানী বলেন, ‘আসলে পরিকল্পনা করে কোনো কিছু করিনি। গরুর সংখ্যা বেড়েছে, একটি করে শেড বাড়িয়েছি। জমিও একটু একটু করে বেড়েছে। এভাবেই চলতে থাকবে। আমাদের গ্রামে এখন পাঁচ শতাধিক নারী কৃষিকাজ করছেন। অনেকেই বলে এটা নারী কৃষকের গ্রাম। এতে আমার কিছু অবদান আছে। আগে আমি পরামর্শের জন্য মানুষের কাছে যেতাম, এখন অনেক মানুষ আমার পরামর্শ নিতে আসে। এটাই আমার ভালো লাগে।

উপসংহার – আপনাদের যদি এই লেখা থেকে কিছুমাত্র লাভ হয় তবে তবে কমেন্ট করবেন। আমরা আরও নতুন নতুন সাফ্যলের গল্প আপনাদের সামনে তুলে ধরব।

শেয়ার করুন -

Leave a Reply